কবরের পাশে দাঁড়িয়েই ইমাম মুহাম্মাদ হবলোস বানী।

২০১৫ সালে বাকের আল মুহাম্মাদ নামের এক অস্ট্রেলিয়ান যুবক ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। আল্লাহ্‌র রহমতে, যা হতে পারত তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের ঘটনা, সেটাকে তিনি তার জীবনের সবচেয়ে সৌভাগ্যের ঘটনায় পরিণত করলেন। পরিবর্তন করে ফেললেন নিজের জীবনকে। প্রস্তুতি নিলেন অন্তিম যাত্রার জন্য। মৃত্যুবরণের আগেই গুছিয়ে নিলেন তার জীবন। তাকে কবর দেয়ার পর, তার কবরের পাশে দাঁড়িয়েই ইমাম মুহাম্মাদ হবলোস আমাদের সকলের উদ্দেশ্যে কিছু উপদেশ দিলেন।বাকের মুহাম্মদের মত আমরাও যেন নিজেদের বদলে ফেলতে পারি। জীবনে ক্যান্সারের মত বিপর্যয় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে, আমরা যেন সক্রিয়ভাবে আমাদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি।

আপনারা ওনাকে আমার থেকে ভালো ভাবে চিন্তেন।আমি বলব না যে আমি ওনাকে খুব ভালোভাবে চিনতাম না।

আমি খালি জানি যখনই আমি ওনাকে দেখতে এসেছি. ওনার মুখে একটা অন্যরকম হাসি দেখেছি. আজকে আমরা এখানে দাঁড়িয়ে ওনার জন্য দুঃখ অনুভব করছি. আজকে আমাদের ওনার জন্য দুঃখিত হবার প্রয়োজন নাই. আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি এই ব্যক্তি অত্যন্ত সম্মানজনক মৃত্যু পেয়েছেন. আলহামদুলিল্লাহ. উনি মারা গেছেন. এখন আমি ওনার প্রশংসা করতেই পারি. ওনার সামনে আমি ওনার প্রশংসা হয়তো করতে চাইনি. আমার ভাইয়েরা. আমাদের কবর স্থানে আসা উচিত. আমাদের নিজেদের বোঝা, দেখা উপলব্ধি হবার আশায়.

আমাদের নিজেদের উপকার এবং পরিবর্তনের জন্য আমরা হয়তো কবরের ভেতরে দেখছি আর ভাবছি বেচারা ক্যান্সারে ভোগে মারা গেলো. এই ক্যান্সার আসলে ওনার জন্য সৌভাগ্য.

কই যাচ্ছি? কি করছি? চিন্তা করার সময় ওনার হাতে ছিল? ওনার কাছে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সময় হাতে ছিল. উনি মারা যাবার আগের দিন আমি ওনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম. উনি আমাকে বলেছিলেন.ক্যান্সার হওয়ার কিছুদিন আগে উনি ওনার মন কেজি কিনা বাড়িটি ছেড়ে দেন. ওনার মন সাহাই দিচ্ছিল না বাড়িটি রাখার জন্য. আর আমরা যত দিন যাচ্ছে যেন আরো বেশি সুদ ইন্টারেস্ট ফাইনান্সে ডুবে চলেছি.

কবে কোথায় কোন একজন স্কলার হয়তো কোন এক সময় কিছু একটা বলেছিলেন তার ভিত্তিতে আমরা এই জঘন্য কাজকে প্রতিনিয়ত করে চলছি আল্লার কসম খেয়ে বলছি এটি একমাত্র পাপ যা করা মানে আল্লা স্বয়ং তার সাথে যুদ্ধ করা হয় বলেছেন।আমরা ভেবে দেখি না একটা আঠারোশো বর্গফুটের একটা জায়গার মালিকানার জন্য আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার সাথে যুদ্ধ করে চলছি অথচ এই কবরে আমাদের শেষ এবং চূড়ান্ত বাসস্থান

এই জীবন আসলে কি এই পার্থিব জীবন থেকে আমরা কি নিয়ে যাবো কবরে? বাঘের আল মোহাম্মদ অনেক ক্যান্সারে ভোগে বিছানায় পড়েছিলেন তারপরও প্রতি ওয়াক্তের সালাত জামাতে আদায় করেছেন. আমরা তরুণ সুস্থ, আমাদের চলাফেরা করার জন্য গাড়িসহ কত ব্যবস্থা রয়েছে.

আমরা সালাত আদায় করি না. আমাদের ওনার জন্য দুঃখিত হবার প্রয়োজন নাই. আমাদের উচিত নিজেদের জন্য শঙ্কিত হওয়া. আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি উনি শেষ যে কাজটা করেছেন. উনি আমাকে

এই টাকাগুলো দিয়েছেন. এবং দিয়ে বলেছেন আমি যেন ওনার হয়ে দান করে দেই. আর আমরা আমাদের ধন সম্পদকে যেন আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই. আল্লাহর কসমকে বলছি উনি একটা সম্মানজনক মৃত্যু বরণ করেছেন.

আমি অনেক মৃত ব্যক্তির গোসল করিয়েছি. ওনার মতো প্রশান্তিময় এবং শান্ত চেহারা আমি কোনো মৃত ব্যক্তির দেখিনি. পুরোটা সময় মনে হয়েছে উনি যেন হাসছেন.

আমার মনে হচ্ছিল বলি তুমি কোথায় আছে ভাই বাক্যের বলো আমিও সেখানে যেতে চাই তাই বলছি ওনার জন্য দুঃখিত হবার প্রয়োজন নেই আমাদের উচিত নিজেদের জন্য শঙ্কিত হওয়া।আমাদের জীবনে কোথায় যাচ্ছি? আমাদের সবারই এমন অভিজ্ঞতা আছে আমি নিশ্চিত. আমি খালি আমার নিজের গত কিছুদিনের কথা বলছি. আহমেদ নামের আমার এক বন্ধু লেবাননে গিয়েছেন. গিয়ে ওনার পরিবারকে এখানে নিয়ে এসেছেন. ঠিক দুঠিক দুদিন আগে ওনার ছয় বছরের শিশুটি মারা গেছে. ছয় বছরের শিশু আল্লার হুকুমে সে আজাদ নেই. বাঁকের উপস্থিত আমাদের অধিকাংশের চেয়ে ছোট হবে বয়সে. আল্লাহর হুকুমে সে আর আমাদের মাঝে নেই. ঠিক গতকালকে আমার চাচা আল্লাহর হুকুমে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন.

আমরা বুঝতে পারি না কতটা ক্ষণস্থায়ী আমাদের এই দুনিয়ার জীবন. আপনি হয়তো ভাবছেন আমি একটু কড়া করে বলছি. আমি এক্সট্রিমিস্ট. আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি একটু কঠোর মনের মানুষ. শুনুন হাবিবুল্লাহ. আপনার কি বলেছেন?

এই দুনিয়াতে মুসাফের বা আগন্তুক এর মত জীবন যাপন করো. এই জীবন যাকে আমরা এত ভালোবাসি যে তার জন্য প্রতিযোগিতা করি একে অপরকে হত্যা করি. পার্থিব বিষয় নিয়ে যেখানে ভাই ভাইয়ের সাথে কথা বলি না. বিশ্বাস করতে পারেন.

রক্তের সম্পর্কের ভাই একসাথে বেড়ে উঠেছে অর্থ ব্যবসাকারী স্ত্রী নিয়ে হয়তো কোনো মনোমালিন্য হয়েছে এখন মুখ দেখা বন্ধ এই দুনিয়া যাকে আমরা আঁকড়ে ধরেছি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তুলনা করেছেন. পথিকের কাছে গন্তব্যে পৌঁছানোর পথে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গার সাথে. আন্তর্জাতিক বিমানে যারা চলেছেন তাঁরা ভালো বলতে পারবেন. আপনার বিমানটির ট্রান্সজেট বা যাত্রা বিরতি হয়েছিল. আবুধাবি বা দুবাইতে.দুটি বিমান যাত্রার মাঝে হয়তো কিছু ঘন্টা সময় আপনি কাটিয়েছেন. কখনো কি এই চিন্তা করেছেন মাত্র কয়েক ঘণ্টা হাতে আছে. যাই একটা বিড়ি কিনি. বা একটা সংসার পাতে. বা একটা লাভজনক ব্যবসা শুরু করে দি.

আমরা এভাবে চিন্তা করি না কারণ আমাদের হৃদয় দুবাই এয়ারপোর্টে নয় বরং চিন্তা করছে আমাদের গন্তব্যের কথা আপনি জানেন আপনাকে চলে যেতে হবে আপনার কানেক্টিং ফ্লাইট কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রওনা দেবে আপনি জানেন আপনাকে অমুক নাম্বার গেটে যেতে হবে এই দুনিয়াটাও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ট্রানজিট বা যাত্রা বিরতির মতো এটা একটা মায়া বা মোহ. কি নিয়ে যাবেন? বাঘকে কি নিয়ে গিয়েছে এই দুনিয়া থেকে? আমি ওনাকে গোসল দিচ্ছি. কাফন পড়িয়েছি. আমি জানি উনি নগ্ন ছিলেন.

কোন গুচ্চি কোন বিএমডব্লিউ কোন উঁচু দালান বা আলিশান এপার্টমেন্ট স্ত্রী বা সন্তান কিছুই ছিল না তাঁর কাছে. আল্লার দোহাই আমার ভাইয়েরা শুনুন. আপনার জন্যে. শুধুমাত্র আপনার ভালোর জন্য বলছি. আপনার হৃদয়কে নাড়া দিন. ধাক্কা দিন. এই জীবনের উদ্দেশ্য কি.কেন আপনাকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে? কি করার জন্য? যদি ইবাদত করার জন্য না পাঠানো হয়ে থাকে তাহলে কিসের জন্য পাঠানো হয়েছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন মৃত্যুর পর কবর পর্যন্ত তিনটি জিনিস যাবে. এক তার পরিবার এবং বন্ধু দুই তার টাকা পয়সা. তিন, তার কাজ বা আমল. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন. এর মধ্যে দুটো জিনিস ফেরত চলে যাবে.

এক তার পরিবার এবং বন্ধু এবং দুই তার অর্থ সম্পদ. এই যে এখন আমরা আমাদের ভাই বাকের কে দাফন করতে এসেছি. আমি শতভাগ নিশ্চিত আগামী এক

পার্ট -২ আসছে..........
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post